পুরুষত্ব ধ্বংস করে নেশা, কিন্তু কীভাবে?

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- শিক্ষিত-অশিক্ষিত অনেকেই নেশাকে রীতিমত একটি সেক্স বৃদ্ধিকারক ‘ টনিক ’ বলেও মনে করেন এবং যৌনমিলনের সময় বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন। অথচ নেশার ফলে মানুষের সেক্স মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বিবাহিতদের ক্ষেএে দাম্পত্য সমস্যারও সৃষ্টি হয়। কোন কোন নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য সাময়িকভাবে হয়তো কিছুটা উওেজনা বৃদ্ধি করতে পারে, কিন্তু তার সুদুরপ্রসারী ফল খুবই ক্ষতিকর। সবচেয়ে বড় কথা, অস্বাভাবিক অবস্থায় একটু বেশী উপভোগ করলেও তা হলো কৃত্রিম। তাতে আনন্দ বা গর্বের কিছু নেই। তাছাড়া, অনাগত ভবিষ্যত বংশধরদের উপরও এটা একটা নেতিভাচক প্রভাব ফেলে। দুর্বল রোগাক্রান্ত বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্যও নেশা অনেকটা দায়ী।

নেশা করতে মদ, গাজা, হিরোইন, ফেনসিডিল, পেথেডিন, সিডাক্সিন, ইউনিকটিন,মরফিন, আফিমসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে যে কোন জিনিষই শরীরে রেসিষ্ট্যান্ট হয়ে যায়। অথাৎ আর পুর্বের মত কাজ করে না। যে কোন একটি নেশায় কেহ আসক্ত হয়ে গেলে কিছুদিন পরেই সে আরো উন্নতমানের নেশা খুঁজতে শুরু করে। নেশাগ্রস্তরা তখন উন্নত নেশার খোঁজে উম্মক্ত হয়ে যায়। ফলে দেখা যায়, যে সাধারণ সিডাক্সিন খেতো, অনেকদিন পর সে আর তাতে মজা পাচেছ না, ব্রান্ড পরিবর্তন করে সে তখন শুরু করে পেথিডিন নেয়া । আর যিনি পেথেডিন নিতেন তিনি শুরু করেন হিরোইন খাওয়া। অনেক সময় তারা নিজেরাই ২/৩ ধরনের দ্রব্য একসাথে মিশিয়ে নিজস্ব ফর্মুলায় নতুন নতুন নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য আবিস্কার করে ফেলেন। নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য সমুহ গ্রহনের ফলে তা প্রথমে শরীরের রক্তে মিশে যায়। তারপর রক্তের মাধ্যমে মস্তিস্কসহ সম্পূর্ন শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে ছড়িয়ে পরে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের সব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ও কর্মকান্ডে বাধার সৃষ্টি করে। আর এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই জীবনীশক্তি ও সেক্স লোপ পেতে থাকে । আগের তুলনায় তার আচার-আচরণ এবং শারিরীক-মানসিক-চারিত্রিক সব দিক দিয়েই পরিবর্তন আসতে থাকে। স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি, কর্মকান্ড এবং কর্মদক্ষতা কমে যেতে থাকে । ফলে আস্তেআস্তে সে হয়ে যায় একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা অর্থাৎ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তার অনেক দুরত্বের সৃষ্টি হয় এবং সে সকলের কাছে একটি ভয়, ঘৃনা বা করুনার পাত্র হয়ে যান।

নেশার কারনে হওয়া শারীরিক ক্ষতিটি আসলে তাৎক্ষনিক কম হয় বলে নেশাগ্রস্তরা সাধারনত তা অনুধাবন করতে পারে না । নেশা যেভাবে শারীরিক ক্ষতিটি করে তা অনেকটা ‘স্লোপয়জনিং’ এর মত অর্থাৎ খুবই ধীরে ধীরে। আস্তেআস্তে এই বিষক্রিয়া জীবন ও জীবনী শক্তি তিলে তিলে নিঃশেষ করতে থাকে । নেশায় ফলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্র গুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয় । যার ফলে নেশাকারী যখন ইনজকেশন তার শরীরে পুশ করে তখন সে কোন ব্যথা বোধ করে না। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আর তাহলো-ভেজাল এখন সবকিছুতেই আছে। ভেজাল নেশার কবলে পরে (বিশেষ করে মদ) মৃত্যুর খবর আজকাল প্রায়ই পএিকায় দেখা যাচ্ছে। এছাড়া, এইডস সহ অন্যান্য সংক্রামক যৌনরোগ সমুহ নেশাগ্রস্তদের অনেক বেশী হয়ে থাকে, বিশেষ করে যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করেন।

নিজের জীবন, নিজ পরিবার তথা দেশ ও জাতির স্বার্থেই নেশা এড়িয়ে চলা উচিত। ‘আমার টাকায় আমি খাব, কার কি’-এ রকম মন-মানসিকতা এক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ এটা নিজ পরিবারসহ সমাজের অন্যদেরও ক্ষতি করে। এবং একজনের দেখাদেখি অন্যরাও প্রভাবিত হয়। প্রথমদিকে অনেকদিনের নেশা একেবারে ছেড়ে দেওয়া একটু কষ্টের কাজ। তবে সম্ভব নয় এটা ভুল ধারনা। সদিচ্ছাই এখানে আসল ব্যাপার। নেশায় আক্রান্ত না হওয়া এবং আক্রান্ত হয়ে গেলে তা থেকে ছাড়ানোর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। আক্রান্ত সদস্যকে নেশা ছাড়ানোর ব্যাপারে প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরার্মশ গ্রহন করা যেতে পারে । চিকিৎসকগন এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগীতা করতে পারেন। তবে এ কথা ঠিক যে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে আক্রাšত যাতে কেহ না হয় সে দিকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া উচিত।